মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:: একজন কমান্ডার হয়েও বিস্ময়ের বিষয় স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় তাঁর নাম নেই। স্বীকৃতি না মেলায় তাঁর পরিবার ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের তথ্য-উপাত্তসহ আবেদন করেও তিনি তালিকাভুক্ত হতে পারেননি।
তিনি হলেন, রোল্যান্ড প্রেন্টিস রনি। ১৯৭১ সালের ১৬ই এপ্রিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পেঁচারতল নামকস্থানে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এসময় তিনি ওই কোম্পানীর কমান্ডার ছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে ৪নং সেক্টর কমান্ডার চিত্ত রঞ্জন দত্তের (সিআরদত্ত) অধীনে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কিন্তু তাঁর সমসাময়িক অনেকেই এখন মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু রনি প্রেন্টিস তালিকায়ই উঠতে পারেন নি কোন অজানা কারণে। রোল্যান্ড প্রেন্টিস রনি ১৭৭৪ সালে প্রবাসে চলে যান। স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য সেখান থেকে অনলাইনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট মৌলভীবাজার সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি ৭জন মুক্তিযোদ্ধার ‘ক’ তালিকায় নির্ধারণ করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে পাঠায়। এই ৭ জনের মধ্যে তালিকায় প্রথম নামই ছিলো রোল্যান্ড প্রেন্টিস রনি। কিন্তু ২০২০ সালের ২ মে অতিরিক্ত গেজেটে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এঘটনায় জেলার মুক্তিযোদ্ধাসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা ব্যথিত হন, অপমানিত হন। সেসময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মৌলভীবাজারের কমান্ডার জামাল উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে কেন রনি প্রেন্টিসের নাম তালিকায় নেই কেন তা জানতে চিঠি দিয়েছেন। সাবেক জেলা কমান্ডার মো. জামাল উদ্দিন বলেন, আমি বিস্মিত হয়েছি তালিকায় তাঁর নাম না দেখে। এটি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানিত করা। আমি আশা রাখবো যথাযথ কর্তৃপক্ষ অতি দ্রæতই তাঁর নাম তালিকাভুক্ত করবে।রোল্যান্ড প্রেন্টিস রনির সাথে সে সময়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন মৌলভীবাজারের সাবেক জেলা কমান্ডার দেওয়ান আবুল খয়ের চৌধুরী, সাবেক থানা কমান্ডার মকবুল খাঁন, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. হারুন মিয়া ও মুক্তিযোদ্ধা কুতুবুর রহমান। এদের সবার নাম তালিকায় থাকলেও রনি নাম নেই।
সাবেক জেলা কমান্ডার দেওয়ান আবুল খয়ের চৌধুরী জানান, রোল্যান্ড প্রেন্টিস রনি মুক্তিযুদ্ধকালীন আমাদের অনেক অনুপ্রেরণা দিতো। সে ভালো ইংরেজীতে কথা বলতে পারতো, গান করতে পারতো। সে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর নাম তালিকায় না থাকায় আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে অপমানিত বোধ করছি।রোল্যান্ড প্রেন্টিস রনির ছোট ভাই প্রবীন আইনজীবী এডভোকেট ডাডলী ডেরিক প্রেন্টিস জানান, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা চাইনা। আমরা চাই আমাদের ভাইকে যেনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বর্তমানে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি সরকার পরিচালনা করছে। তাই আমি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানাচ্ছি যেনো আমার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ভাই এর নাম তালিকাভুক্ত করে উনিসহ আমাদের পরিবারকে সম্মানিত করুন।
বিএ/১৬ ডিসেম্বর